শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৮ অপরাহ্ন
বিডিনিউজ : করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে নতুন বছর এসেছে টিকার আশা নিয়ে; কবে বাংলাদেশ টিকা পাবে, আর কীভাবে সেই টিকা দেওয়া হবে- সেসব বিষয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরছে মানুষের মনে।
সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর এবং টিকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ইতোমধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা আমদানি ও বাংলাদেশে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও মর্ডানা, রাশিয়ার গামালিয়া রিসার্চ ইন্সটিটিউট এবং চীনের সিনোভ্যাক টিকা তৈরি করেছে। তবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা আমদানিই নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বা গ্যাভি এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের গড়া প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স এর আওতায় আরও আড়াই কোটি ডোজ টিকা আগামী জুনের মধ্যে বাংলাদেশ পাবে বলে সরকার আশা করছে।
বাংলাদেশে টিকা আসার পর কোথায় রাখা হবে, কারা এই টিকা পাবে, বিতরণ প্রক্রিয়া কী হবে-তা নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, কোভ্যাক্স থেকে কোন টিকা পাওয়া যাবে তা এখনও নিশ্চিত না। এ কারণে অক্সফোর্ডের টিকা সামনে রেখেই পরিকল্পনা সাজিয়েছেন তারা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে টিকা সংরক্ষণের জন্য কোল্ড চেইনের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা হবে।
ফাইজারের টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়, এ কারণে বাংলাদেশের পরিকল্পনায় আপাতত ফাইজার নেই।
“অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার জন্য আমরা আপাতত পরিকল্পনা করছি। কিন্তু প্ল্যান-বি হিসেবে সেগুলোও (ফাইজার, স্পুৎনিক-ভি, মডার্না) আমাদের চিন্তার মধ্যে রেখেছি।”
সরকার যে পরিকল্পনা সাজিয়েছে, তাতে টিকা দেওয়া হবে কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের। শুরুতে টিকা পাবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আর সাধারণ মানুষকে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন অথবা পাসপোর্ট দেখিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
কিন্তু টিকা আসবে কবে?
করোনাভাইরাসের টিকা আমদানির আলোচনার শুরু হয় গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে। এরপর ৫ নভেম্বর অক্সফোর্ডের টিকা আনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ।
চুক্তির আওতায় সেরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশকে তিন কোটি ডোজ টিকা দেবে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসবে বাংলাদেশে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকার ১০০ কোটির বেশি ডোজ উৎপাদন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরবরাহের জন্য অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং গেটস ফাউন্ডেশন ও গ্যাভির সঙ্গে আংশীদারিত্ব চুক্তি রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউটের।
ভারত থেকে টিকা এনে বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য গত অগাস্টে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় দেশের ওষুধ খাতের শীর্ষ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।
সেই চুক্তি অনুযায়ী, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর।
ভারত থেকে আনা প্রতি ডোজ টিকার দাম পড়বে ৪২৫ টাকার মত। চুক্তির অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেরাম ইনস্টিটিউটকে ৬০০ কোটি টাকা অগ্রিম দিয়েছে।
টিকা কবে আসবে তা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্থানীয় চাহিদা মেটাতে ভারত টিকা রপ্তানি বিলম্বিত করতে পারে, এমন খবরে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয় গত কয়েক দিনে।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সরকারের তরফ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ীই টিকা পাবে বলে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস বলেছে, চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশে টিকার অনুমোদন দেওয়ার এক মাসের মধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউট প্রথম চালান পাঠানোর কথা।
বাংলাদেশে টিকার অনুমোদন দিয়েছে ৪ জানুয়ারি। সেই হিসাব করলে টিকা পেতে বাংলাদেশকে অন্তত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নানও সেরকম ইংগিতই দিয়েছেন।
সংরক্ষণ-সরবরাহ কীভাবে
স্বাস্থ্য অধিদ্প্তর জানিয়েছে, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস আমদানি করার পর এই টিকা জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেবে। জেলা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় টিকা পাঠানো হবে উপজেলা পর্যায়ে।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, সেরাম ইনস্টিউট থেকে টিকা যাবে দিল্লি। তারপর বিমানে করে ঢাকায় আনা হবে। পরে তা প্রাথমিকভাবে রাখা হবে বেক্সিমকোর ওয়্যার হাউজে। সেজন্য ঢাকায় বেক্সিমকোর একটি ওয়্যার হাউজ প্রস্তুত করা হয়েছে।
“আমাদের দায়িত্ব টিকা আনা থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। টিকা পরিবহনের জন্য সাতটি বিশেষায়িত ট্রাক কেনা হয়েছে। আরও ট্রাক কেনা হবে।”
সরকারের কেন্দ্রীয় ঔষাধাগার- সিএমএসডিও টিকা সংরক্ষণে আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে।
সিএমএসডির পরিচালক আবু হেনা মোর্শেদ জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাদের আটটি কোল্ড স্টোরেজে ২ ডিগ্রি থেকে ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় টিকা রাখা যাবে। এসব কোল্ড স্টোরেজে বর্তমানে হাম-রুবেলার টিকা রাখা আছে। এসব টিকা বিতরণ শেষ হবে ২৪ জানুয়ারির মধ্য। এছাড়া কিছু অ্যান্টিভেনম আছে, তাও জানুয়ারির মধ্যে সিএমএসডি বিতরণ করে ফেলবে।
“পুরোপুরি খালি করে ফেলার পর সেখানে ৫০ লাখ টিকার বেশি টিকাও যদি জানুয়ারির শেষ দিকে এসে যায়, তা সংরক্ষণ করা যাবে।”
এছাড়া সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি জেলায় ইপিআই স্টোর আছে। প্রতিটি স্টোরে দুই লাখ করে টিকা রাখা যাবে।
জেলা থেকে উপজেলায় পাঠানো হবে টিকা। উপজেলার আইএলআর ফ্রিজে ৩০ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার করে টিকা রাখা যায়। উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায় কোল্ড বক্সে করে টিকা পরিবহন করা হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রথমে পাবেন কারা?
সরকার দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, তিন ভাগে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে এসব টিকা দেওয়া হবে, যেখানে প্রাধান্য পাবে কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষ।
প্রথম ফেইজের প্রথম ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশ, অর্থাৎ ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জন টিকা পাবেন। দ্বিতীয় ধাপে মোট জনসংখ্যার সাত শতাংশ, এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন টিকা পাবেন।
প্রথম ফেইজের দুই ধাপে বিতরণ শেষে টিকা দেওয়া শুরু হবে দ্বিতীয় ফেইজ। এ পর্যায়ে টিকা পাবেন এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৮ জন, যা মোট জনসংখ্যার ১১ থেকে ২০ শতাংশ।
তৃতীয় ফেইজেও দুই ধাপে দেওয়া হবে নভেল করোনাভাইরাসের টিকা। এ পর্যায়ের প্রথম ধাপে জনসংখ্যার ২১ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থাৎ তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৭ জন টিকা পাবেন। আর শেষ ধাপে জনসংখ্যার ৪১ থেকে ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৪ জনকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা হলেও এখন পর্যন্ত তিন কোটি ডোজ টিকার জন্য চুক্তি হয়েছে, যা জুনের মধ্যে বাংলাদেশের পাওয়ার কথা।
আর কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য টিকার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এর অংশ হিসেবে আড়াই কোটি ডোজ টিকা জুনের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এর আগে জানিয়েছিলেন।
ভারত থেকে ৩ কোটি টিকার প্রথম চালানে আসবে ৫০ লাখ ডোজ টিকা। অক্সফোর্ডের তৈরি এই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। অর্থাৎ, প্রথম চালানের টিকা পেলে তা ২৫ লাখ মানুষকে দেওয়া যাবে।
প্রথমে যে টিকা আসবে তার দুই ভাগের এক ভাগ প্রথম ডোজ হিসেবে দেওয়া হবে। বাকিটা রেখে দেওয়া হবে দ্বিতীয় ডোজের জন্য।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত মাসে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “আমরা প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দিতে পারব। সে হিসাবে অক্সফোর্ডের টিকা দিতে লাগবে ৬ ছয় মাস। সব মিলিয়ে (কোভ্যাক্সসহ) সাড়ে পাঁচ কোটি টিকা দিতে প্রায় বছর খানেক সময় লাগবে।”
করোনাভাইরাসের টিকা বিতরণ প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রথম ধাপে যে টিকা আসবে তা পাবেন করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় সম্মুখভাগে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীরা।
“প্রথম লটে সব ধরনের স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। পরে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ অন্যরা। তালিকা দেখেই আমরা বুঝব কাকে কাকে টিকা দেওয়া হবে।”
স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে টিকা পাবেন
বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মীদের ‘ফ্রন্টলাইনার’, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মী, দাফন ও সৎকারে নিয়োজিতরা, ইমাম-মুয়াজ্জিন-পুরোহিত, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাসের মত জরুরি সেবার কর্মী, বিমান, স্থল ও সমুদ্র বন্দরের কর্মী, ব্যাংকার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী স্বাস্থ্যকর্মীরা।
এইডস, যক্ষ্মা এবং ক্যান্সারের মতো রোগের ওষুধ গ্রহণের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে এমন পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার মানুষও প্রথম পর্যায়ে টিকা পাবেন।
আর প্রথম ফেইজের দ্বিতীয় ধাপে যারা টিকা পাবেন, তাদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
টিকা পেতে কী করতে হবে?
করোনাভাইরাসের টিকা পেতে একটি অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আর সেজন্য আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন অথবা পাসপোর্টের তথ্য দিতে হবে।
এই নিবন্ধনের জন্য একটি অ্যাপ তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এমআইএস, আইসিটি বিভাগ এবং এটুআই এই অ্যাপ তৈরির কাজ করছে।
“মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পাওয়া আবেদনের ভিত্তিতে তৈরি হবে অগ্রাধিকারের তালিকা। সেই তালিকা অনুযায়ী টিকা দেওয়া হবে। সবাইকেই অনলাইনের মাধ্যমে আসতে হবে।”
তিনি জানান, কেউ অ্যাপে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করলেই একটি গ্রুপে পড়ে যাবেন। নির্বাচিত ব্যক্তিকে একটা সফটওয়্যারের মাধ্যমে এসএমএস পাঠিয়ে জানানো হবে, কবে কখন কোথায় গিয়ে তাকে টিকা নিতে হবে।
“আমরা আরেকটা অপশন রাখার চিন্তা করছি, অফিস থেকে তালিকা সংগ্রহ করার, তবে এটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।”
হাবিবুর রহমান জানান, এসএমএস পাঠানোর দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে তা নিয়ে বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, টেলিটক এই দায়িত্ব পাবে।
ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টিকার সঠিক ব্যবহার, বয়স নির্ধারণসহ সবকিছু সুচারুভাবে করতে নিবন্ধনের সময় পরিচয়পত্র প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।
“ঠিকানা, বয়স এসব যেন ভেরিফাই করা যায়, সেজন্য আমরা জাতীয় পরিচয়পত্র নিচ্ছি। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকবে না, তাদের জন্মনিবন্ধন লাগবে। এগুলো নেওয়ার কারণ হচ্ছে আমরা যেন যাচাই করতে পারি, সঠিক অবস্থানটা চিহ্নিত করতে পারি, কাকে কোথায় টিকা দেওয়া হবে।”
বিতরণ হবে কোথায়?
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির বর্তমান ব্যবস্থাপনার আদলেই করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
প্রথমে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। টিকা দেওয়ার কাজটি করবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ অন্য কর্মীরা।
টিকা আসার দ্বিতীয় মাসে তা সম্প্রসারিত হবে ইউনিয়ন পর্যায়ে। সে সময় স্বেচ্ছাসেবকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের এই কাজে যুক্ত করা হবে।
জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি করা খসড়া অনুযায়ী, ২০ হাজার ৮০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী টিকা প্রয়োগে সরাসরি যুক্ত থাকবেন। তাদের সঙ্গে দুজন করে ৪১ হাজার ৬০০ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন।
সারাদেশের জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকা বহনে ৫ হাজার ৪৬৯ জন পোর্টার এবং ৮ হাজার ৮৬৯ জন সুপারভাইজার থাকবেন।
স্বাস্থ্যকর্মী, স্বেচ্ছাসেবকসহ ৬ জনের একটি দল কাজ করবেন প্রতিটি কেন্দ্রে। তাদের কার্যক্রম তদারক করবেন বিভাগীয় পর্যায়ে ২৪ জন এবং জাতীয় পর্যায়ের ১৬ জন কর্মকর্তা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, সারাদেশে ৬ হাজার ৫০০টি টিকাদান কেন্দ্র করা হবে। এর মধ্যে ৪৬০০টি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে, ৬০০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ২০ ও ১০ শয্যার হাসপাতালে এই কেন্দ্র হবে।
এছাড়া জেলা সদর হাসপাতাল/জেনারেল হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ (সরকারি/বেসরকারি) সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে কেন্দ্র হবে ৪০০টি।
সিটি করপোরেশন এলাকার বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, সংক্রমকব্যাধি হাসপাতাল, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়, নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ৮০০টি টিকাদান কেন্দ্র থাকবে।
আর ১০০টি টিকাদান কেন্দ্র করা হবে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল, সচিবালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং সংসদ সচিবালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ফ্লোরা জানান, প্রতি ধাপের টিকা মাসের প্রথম পনের দিনের মধ্যে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা দেরি হতে পারে।
“সাড়ে দশ কোটি মানুষকে টিকা দিতে কমপক্ষে এক বছর লাগবে। এর চেয়ে বেশিও লাগতে পারে। আমাদের এত পরিমাণ টিকা পেতে হবে। আমাদের প্রস্তুতির সমস্যা না। কিন্তু এত ভ্যাকসিন পাওয়াও ব্যাপার।”
যারা টিকা পাবেন না
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, অক্সফোর্ডের টিকা ১৮ বছরের কম বয়সীদের ওপর পরীক্ষা করা হয়নি। এ কারণে অপ্রাপ্তবয়স্ক কাউকে টিকা দেওয়া হবে না।
গর্ভবতী নারীদের ওপর কোনো পরীক্ষা না হওয়ায় এই টিকা সাধারণভাবে তারাও পাচ্ছেন না। দুগ্ধদানকারী মায়েদেরও দেওয়া যাবে না। যাদের ড্রাগ অ্যালার্জি আছে, তাদের ব্যাপারেও সাবধানতা অবলম্বন করা হবে।
জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটির প্রধান অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, “তাদের (গর্ভবতী নারী) মধ্যে কেউ যদি সিরিয়াস অবস্থায় থাকেন যে টিকা না দিলে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হতে পারেন, তাতে জীবনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, তেমন গর্ভবতী নারীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে।”
করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, এমন ব্যক্তিরা এই টিকা নিতে পারবেন বলে জানান মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply